বীজ ও উদ্যান উইং:
বিএডিসি একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান যার কাজ হচ্ছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত ফসলের নতুন জাতের বীজ পরিবর্ধন করা। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহের মাধ্যমে প্রযুক্তিগতভাবে উৎকর্ষতা অর্জন করেছে। ১৯৬১ সালে মাত্র ১৩.৮ মে.টন বীজ দিয়ে বিএডিসির বীজ কার্যক্রম শুরু হয়। আধুনিক জাতের মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকের নিকট প্রতিষ্ঠানটি যেমন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তেমনিভাবে দেশে সুসংগঠিত বীজ ব্যবস্থার উন্নয়নে যথেষ্ঠ অবদান রেখেছে। বিএডিসি ২০১৫-১৬ সালে বীজ উৎপাদন খামার এবং কঃগ্রোঃজোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের ১,৪১,০২২ মে.টন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করেছে।
বীজ ও উদ্যান উইং এ বিদ্যমান সুবিধাদীঃ
- ৩৪টি ভিত্তিবীজ বর্ধন/উৎপাদন খামার (দানাজাতীয় বীজ উৎপাদন খামার ২৪টি, পাটবীজ খামার ২টি, ডাল ও তৈলবীজ খামার ৪টি, আলুবীজ খামার ২টি);
- ১০৯৫৩১ একর Command Area নিয়ে ৭৫টি কঃগ্রোঃ জোন এবং ৩৭৬১১ জন চুক্তিবদ্ধ চাষি;
- ১৬৮৭০০ মে.টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৫২টি আধুনিক বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ কেন্দ্র। ৩টি অটোসিড প্রসেসিং প্লান্ট ও ডিহিউমিডিফাইড গোডাউন;
- ঢাকায় ১টি কেন্দ্রীয় বীজ পরীক্ষাগার;
- দেশব্যাপী ট্রানজিট বীজ গোডাউনসহ ১০০টি বীজ বিক্রয় কেন্দ্র, ৮০৫৬ জন বীজ ডিলার নিয়ে ১টি সুসংগঠিত মার্কেটিং চ্যানেল। বীজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে আভ্যন্তরীণ মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি;
- দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪টি এগ্রো সার্ভিস সেন্টার এবং ৯টি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্র।
বীজ ও উদ্যান উইং এর প্রধান কার্যক্রমঃ
- বীজনীতি প্রণয়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান;
- দানাজাতীয় ফসল, আলুবীজ, পাটবীজসহ অন্যান্য ফসলের ভিত্তি, প্রত্যায়িত এবং মানঘোষিত শ্রেণির বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ;
- বীজ উৎপাদনে সেবা প্রদান;
- বীজ উৎপাদনের নিমিত্ত চুক্তিবদ্ধ চাষি Block স্থাপনে কারিগরি সহায়তা প্রদান;
- প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ
- কারিগরি সহায়তা প্রদান ও প্রশিক্ষণ প্রদান ;
- ভিত্তি, প্রত্যায়িত এবং মানঘোষিত বীজের মান নিয়ন্ত্রণ;
- ভিত্তি ও প্রত্যায়িত মানের বীজআলু সংরক্ষণের জন্য বীজআলু হিমাগার স্থাপন;
- বীজ ডিলারদের প্রশিক্ষণ প্রদান;
- মানসম্পন্ন বীজ আমদানী ও রপ্তানী।
- হাইব্রিড জাতের বীজ উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণবীজ উৎপাদনে সেবা প্রদান;
- ডিএই এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ সহায়তায় বীজের চাহিদা নিরূপন;
- প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে বীজআলুসহ উদ্যান ফসলের চারা/কলম উৎপাদনে প্রশিক্ষণসহ কারিগরি সহায়তা প্রদান।
সার ব্যবস্থাপনা উইং
- -৬১ অর্থ বছর থেকে বিএডিসি ৩১,০০০ মে. টন সার দিয়ে বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৬-০৭ অর্থ বছর হতে বিএডিসি পুনরায় নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি , এমও পি) আমদানি, সংরক্ষণ ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি, সারা বাংলাদেশের ২১টি অঞ্চলের ৪৮টি বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে নন-ইউরিয়া (টিএসপি, ডিএপি , এমও পি) সার বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিএডিসি’র ১১২টি সার গুদাম রয়েছে যার সর্বমোট ধারণক্ষমতা ১,৫২,৭৬৬মে. টন। বিএডিসি ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ৯.৮৮ লক্ষ মে.টন, ৯.০০ লক্ষ মে.টন এবং ৯.৯০ লক্ষ মে.টন নন-ইউরিয়া সার বিতরণ সম্পন্ন করেছে।
সার ব্যবস্থাপনা উইংএর প্রধান কার্যক্রম এবং কার্যাবলী
- নন-ইউরিয়া সারের বাফার মজুদ রক্ষা করা;
- সারের প্রাপ্যতা, সারের মান নিয়ন্ত্রণ ও সার আইন প্রয়োগ কার্যক্রম মনিটরিং করা;
- সরকারী ও বেসরকারী খাতের অধীনে নন-ইউরিয়া সার আমদানি কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান;
- সার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা।
ক্ষুদ্রসেচ উইং:
১৯৬১-৬২ অর্থ বছরে বিএডিসি’র সূচনালগ্নে মাত্র ১৫৫৫টি শক্তিচালিত পাম্প দ্বারা সেচ কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৬৭-৬৮ সালে বিএডিসি গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার শুরু করে এবং ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছরে সেচ কাজে ব্যবহার তথা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অগভীর নলকূপ সরবরাহ ও স্থাপন শুরু করে। বর্তমানে দেশে ১৬৭১৭৫টি শক্তিচালিত পাম্প (এলএলপি), ৩৬৫৬৬টি গভীর নলকূপ এবং ১৫,৪৯৭১১ টি অগভীর নলকূপ সেচ কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। এ ছাড়াও কিছু হস্তচালিত ও সনাতন পদ্ধতির যন্ত্রপাতি দ্বারা সেচ কাজ পরিচালনা করে সর্বমোট ৫৪.৪৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে সারাদেশে বোরো মৌসুমে সেচ প্রদান নিশ্চিত করেছে (বিএডিসি জরিপ প্রতিবেদন ২০১৪-১৫)। বিএডিসি ভূপৃষ্ঠস্থ পানি সংরক্ষণ এবং গ্র্যাভিটি ফ্লো পদ্ধতিতে সেচ কাজ সম্পন্ন করার জন্য রাবার ড্যাম নির্মাণ কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৪টি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে এবং রাবার ড্যাম ওহাইড্রলিক এলিভেটেড ড্যাম স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিএডিসি ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১১টি সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্প স্থাপন করেছে। এতদ্ব্যাতীত বিএডিসি সেচ ব্যবস্থাপনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সেচ পানি ব্যবহার বিষয়টি কৃষকের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। বর্তমানে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়নে বিএডিসি বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
ক্ষুদ্রসেচ উইং এর বর্তমান কৌশল:
- ২০১২ সালের মধ্যে প্রায় ৫৪ লক্ষ হেক্টর সেচকৃত জমি হতে ৬০ লক্ষ হেক্টরে উন্নীতকরণ (বৎসরে প্রায় ১ লক্ষ হেক্টর হিসেবে, প্রয়োজনীয় প্রকল্প/কর্মসূচি প্রাপ্তির সাপেক্ষে)।
- ভূপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে খাল-নালা খনন/পুনঃখনন করা।
- সঠিক পরিমাণ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি স্তর অবনমন রোধ করা।
- সেচ দক্ষতা ৩৪% থেকে ৪৮% এ উন্নীতকরণ।
- ২০২১সালের মধ্যে ফলনপার্থক্য ৩ টন/হেক্টর থেকে ১ টন/হেক্টরে নামিয়ে আনা এবং
- ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ।
ক্ষুদ্রসেচ উইং এর মূল কাজ ও কার্যক্রমসমূহ:
- খাল-নালা খনন/পুনঃখননের মাধ্যমে সেচ এর জন্য ভূ-পরিস্থ পানির সংরক্ষণ ও পানি নিষ্কাশন ;
- বিভিন্ন ধরনের হাইড্রলিক স্ট্রাকচার নির্মাণের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ও ভূ-পরিস্থ পানির সংরক্ষণক্ষমতা বৃদ্ধি;
- বিভিন্ন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প এবং ফোর্সমোড পাম্প স্থাপন;
- যে সকল জায়গায় ভূগর্ভস্থ পানি সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের সাকশন লিমিট এর নিচে থাকে সে সকল স্থানে ফোর্সমোড পাম্প স্থাপন করা হয়;
- পানির অপচয় কমানোর জন্য সারফেস ও সাব সারফেস সেচ নালা (ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন) নির্মাণ;
- ছোট নদী ও খরস্রোতা খালে রাবার ড্যাম এবং হাইড্রলিক এলিভেটেড ড্যাম নির্মাণ;
- পুরাতন ডিপ টিউবওয়েলসমূহ পুনর্বাসন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ;
- সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পের সূচনা (নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার);
- সেচ চার্জ আদায় এবং পানির যথাযথ ব্যবহার এর জন্য স্মার্ট কার্ড প্রিপেইড মিটার স্থাপন;
- অটো ওয়াটার লেভেল রেকর্ডারের মাধ্যমে সেচযন্ত্রের জরিপ ও পরিবীক্ষণ, সেচকৃত এলাকা এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মনিটরিং এবং ডাটা লগার ও ডাটাবেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন;
- জলবায়ু পরিবর্তন ও অদূর ভবিষ্যতে এর প্রভাব স্বরুপ উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের ডাটা বেজ তৈরী করা ।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ কার্যক্রমসমূহঃ
জাতীয় চাহিদা পূরণ এবং ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএডিসি যেসকল প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেঃ
সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী লিঃ ইত্যাদি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহঃ ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, গোল্ডেন বার্ন কিংডোম, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস ইত্যাদি
বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহঃ এস.এল এগ্রিটেক কর্পোরেশন, ফিলিফাইনস, ইউয়ান’স সিড কোম্পানি লিঃ, চায়না, উইনাল হাই-টেক সিড কোম্পানি লিঃ, চায়না, সেনজেন বোশি বায়োসায়েন্স কোম্পানী লিঃ, চায়না, আমত্মর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, ফিলিপাইনস, বেলারুশনান পটাশ কোম্পানি, বেলারুশ, প্রোডিনটরগ, রাশিয়া, কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন, ওসিপি, মরক্কো, জিসিটি, তিউনিশিয়া ইত্যাদি।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
নানামুখী কার্যক্রমের সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিএডিসি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ
- ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৭-এ স্বর্ণপদক।
- জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা-২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫: প্রথম পুরস্কার।
- বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে খাদ্য মেলা-২০১৫: প্রথম পুরস্কার।
- কৃষি প্রযুক্তি মেলা-২০১৩: প্রথম পুরস্কার।
- জাতীয় বীজ মেলা-২০১১,২০১২: প্রথম পুরস্কার।
- বীজ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় বীজ সম্মেলন মেলা-২০০৮: প্রথম পুরস্কার।
- বিশ্ব খাদ্য দিবস মেলা-২০০৬: প্রথম পুরস্কার।
- ঢাকা রপ্তানি মেলা-১৯৭৭, ১৯৭৯ ও ১৯৮১: প্রথম পুরস্কার।
- The Reflector Award-2013।